ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বহু জগতের উপস্থিতি একটি চমৎকার গবেষণার বিষয় বলে মনে হয়।
এবং আমার ব্যক্তিগত মতামত যে বহু জগতের অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে যেটা Multiverse নামে পরিচিত।
আর এই ব্লগে আমি সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করব। প্রমাণ হতেও পারে নাও হতে পারে তবে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হবে ইনশাআল্লাহ।
পার্ট ১: মাল্টিভার্স কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও কসমোলজির আলোচনায় 'Multiverse' বা বহু-বিশ্ব (একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্ব) একটি আলোচিত ধারণা। এটি অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্ব ছাড়াও অসংখ্য স্বতন্ত্র মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল, যাদের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রা, সময় ও অস্তিত্বের ধরন থাকতে পারে। কিন্তু এই ধারণা কি শুধুই আধুনিক বিজ্ঞানীদের কল্পনা, নাকি কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদীসে এই ধারণার কিছু ভিত্তি বিদ্যমান?
-------------- --------------
কুরআনের যে আয়াতগুলো মাল্টিভার্সের ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করে
১. সূরা ফাতিহা (১:২)
"الْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِينَ"
অনুবাদ: “সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা।”
এখানে “الْعٰلَمِينَ” (আলামীন) শব্দটি বহুবচন। এটি শুধু মানবজাতি নয়, বরং জিন, ফেরেশতা, প্রাণিজগৎ, দৃষ্টিগোচর ও অদৃশ্য জগত সব কিছুকে বোঝায়। গ্রামার অনুসারে এটি আলাম (عالم)-এর বহুবচন, যার দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা ও অস্তিত্ব বোঝানো হয়। অনেকে একে বহু মহাবিশ্বের দিকে ইঙ্গিত বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।
সূরা তালাক (৬৫:১২)
"اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ..."
অনুবাদ: “আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং পৃথিবী থেকেও তাদের অনুরূপ।”
এই আয়াত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর মতো আরও 'অনুরূপ' পৃথিবী আছে। আরবি ব্যাকরণে "مِثْلَهُنَّ" শব্দটি ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে সংখ্যায় ও প্রকৃতিতে 'সাদৃশ্যপূর্ণ' অনেক পৃথিবী, যা বহু গ্রহ বা মহাবিশ্বকে ইঙ্গিত করতে পারে।
------------------------ ------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এক রাতে আল্লাহ্ ‘মি’রাজ’ বা আসমানী সফরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি এক এক করে প্রথম আসমান থেকে সপ্তম আসমান পর্যন্ত গমন করেন এবং প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ইঙ্গিত:
এটি স্পষ্ট করে বোঝায় যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরেও একাধিক স্তরের অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো বাস্তব, জীবন্ত এবং সজ্ঞানে রয়েছে।
প্রতিটি আসমানে আলাদা নবী এবং বিশেষ বাস্তবতা ছিল।
এই সাত আকাশ কেবল ভৌত পরিমণ্ডল নয়, বরং পৃথক "dimensions" বা অস্তিত্বের স্তর হিসেবে বোঝা যায়।
------------------------ ------------------------
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আকাশের প্রতিটি স্তরে রয়েছে এমন ফেরেশতা, যারা কখনো আল্লাহর ইবাদতে বিরতি দেয় না।”
ইঙ্গিত:
এটি প্রতিটি আকাশ বা বাস্তবতা স্তরে আলাদা সত্ত্বা, সিস্টেম, ও বসবাসকারী প্রাণী বা ফেরেশতার অস্তিত্বকে নির্দেশ করে।
এগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এবং সেগুলো মানবজগত থেকে পৃথক হলেও বাস্তব।
------------------------ ------------------------
লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক) কুরআন ও হাদীসে এক মহা স্তর হিসেবে চিত্রিত হয়, যেখানে কায়েনাতের যাবতীয় ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে। এটি এমন এক মহাবিশ্বগত স্তর, যা আমাদের জ্ঞানের বাইরে।
------------------------ ------------------------
নবীজি (সা.) বলেন, “আমি জিবরাইলকে তাঁর প্রকৃত রূপে দেখেছি—তার ৬০০ ডানা রয়েছে, যার প্রতিটি দিক আকাশ আচ্ছন্ন করে রাখে।”
সহীহ মুসলিম, হাদীস: 174
ইঙ্গিত:
এটা বোঝায় যে, আমাদের সীমিত পৃথিবীর বাস্তবতা ছাড়াও এমন অস্তিত্বের স্তর রয়েছে, যেখানে এমন বিশাল সত্ত্বার অস্তিত্ব সম্ভব।
-------------------------৷ ------------------------
ইমাম ইবন কাসীর (রহ.) — তাফসীর ইবনে কাসীর:
সূরা তালাক (৬৫:১২) এর তাফসীরে তিনি বলেন, “এখানে আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীর মতো আরও অনুরূপ সৃষ্টির কথা বলেছেন, যা বিভিন্ন স্তরে বা আলাদা পৃথিবী হতে পারে।”
ফখরুদ্দিন আর-রাজি (রহ.) — তাফসীর আল-কাবীর:
সূরা ফাতিহা-এর "العالمين" শব্দের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এটি এমন বহুবচন যা বহু অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। একেকটা আলম মানে একেকটা বাস্তবতা বা অস্তিত্বের পরিমণ্ডল।”
ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ.) — মাজমু’ ফাতাওয়া:
তিনি বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোনও সীমা নেই। তিনি এমন জগতও সৃষ্টি করেছেন, যেগুলোর আমাদের জ্ঞান নেই।” (মাজমু’ ফাতাওয়া, খণ্ড ৪,)
------------------------ --------------------------
ইরানের শারিফ ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ও দার্শনিক Dr. Mehdi Golshani মাল্টিভার্স ধারণাকে ইসলামী বিশ্বদৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করেন। তিনি বলেন, কসমোলজির সূক্ষ্ম সমন্বয় (fine-tuning) ঈশ্বরের সৃষ্টির সৌন্দর্যের প্রমাণ, যা মাল্টিভার্স ধারণার চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি কুরআনের সূরা ফাতিহার “رَبِّ الْعَالَمِينَ” (সব জগতের পালনকর্তা) শব্দগুচ্ছকে বহু-বিশ্বের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
--------------------------- -----------------------------
ইসলামী বিজ্ঞান ও দর্শনের গবেষক আদি সেতিয়া ২০০৪ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে কুরআনের সাত আকাশের ধারণাকে মাল্টিভার্সের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, কুরআনের এই বর্ণনা আধুনিক মাল্টিভার্স তত্ত্বের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাজি (রহ.)
যদিও তিনি মধ্যযুগীয় আলেম, তবে তার তাফসীর “মাতালিব আল-আলিয়া” তে মাল্টিভার্সের ধারণা স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি কুরআনের “رَبِّ الْعَالَمِينَ” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ্ অসংখ্য জগত সৃষ্টি করতে সক্ষম, যা আমাদের জগতের চেয়েও বৃহৎ ও ভিন্ন হতে পারে।
------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment