Tuesday, May 27, 2025

ইসরাইল ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ

 আজকে আমি আলোচনা করব ইজরাইল এবং ফিলিস্তিনের ইতিহাস সম্পর্কে



প্রাক প্রাথমিক ইতিহাস:

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ইহুদিদের (بني إسرائيل – বনি ইসরাইল) যাত্রা শুরু হয় নবী ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে।

নবী ইব্রাহিম (আঃ)

তাঁকে ইসলাম ধর্মে "আবু আল-আম্বিয়া" (নবীদের পিতা) বলা হয়।

তাঁর দুই পুত্র: ইসমাঈল (আঃ) ও ইসহাক (আঃ)

ইসহাক (আঃ)-এর ছেলে ইয়াকুব (আঃ), যাঁর অপর নাম ইসরাইল

তাই ইয়াকুব (আঃ)-এর সন্তানেরাই হলেন বনি ইসরাইল (ইসরাইলের সন্তান)


নবী মূসা (আঃ) – বনি ইসরাইলদের মুক্তি ও শরিয়তের সূচনা

ইহুদি জাতি তখন মিশরে ফিরআউনের অধীনে ক্রীতদাস ছিল

আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে প্রেরণ করেন তাদের মুক্তি দিতে

সাগর চিরে বনি ইসরাইলকে বের করে আনা হয়

এরপর তারা সিনাই মরুভূমিতে গিয়ে তাওরাত (তোরাহ) লাভ করে

এই সময় থেকেই এ জাতির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে



ইহুদি” শব্দের উৎপত্তি:

“ইহুদা” ছিল ইয়াকুব (আঃ)-এর এক পুত্র, তাঁর বংশধরদের থেকেই “Yahudi” বা “Jew” শব্দ এসেছে

তবে ধর্মীয় জাতি হিসেবে ইহুদিরা পরিচিতি পায় নবী মূসা (আঃ)-এর শরিয়তের মাধ্যমে



------------------------  ------------------------ 
কুরআনে বনি ইসরাইলদের অনেক কাহিনি আছে (সূরা আল-বাকারা, সূরা আল-আরাফ, সূরা ত্বাহা ইত্যাদি)

তারা বারবার নবীদের অমান্য করেছে, আবার কখনও তারা ছিল আল্লাহর প্রিয় জাতি


------------------------  ------------------------  -----------------

সিনাই মরুভূমিতে ঘোরাঘুরি (৪০ বছর):

মূসা (আঃ) বনি ইসরাইলকে ফিরআউনের হাত থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন

তারা ফিলিস্তিন (তৎকালীন কনআন) ভূমিতে যেতে ভয় পায়, অমান্য করে
আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তাদের ৪০ বছর সিনাই মরুভূমিতে ঘোরাঘুরির আদেশ দেন (সূরা মায়িদাহ: ২৬)

তারা মরুভূমিতেই ছিল, মন্ন ও সালওয়া খেত। 


মূসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর নবী ইয়ুশা (আঃ)-এর নেতৃত্বে বনি ইসরাইল কনআন ভূমি (বর্তমান ফিলিস্তিন ও এর আশপাশ) দখল করে

এখানে তারা ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে জেরিকো, হেবরন, শিখিম প্রভৃতি এলাকায় বসতি স্থাপন করে

তারা বহু বছর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানোর পর জেরিকো (Jericho) নামক শহর দখল করে নেয়।
এই সময় থেকে ইসরাইলিরা প্রথমবারের মতো নিজেদের জায়গা পায়, ঘর বানায়, চাষাবাদ শুরু করে।
------------------------  ------------------------ 

ইউশা (আঃ) মারা গেলে নতুন কোন রাজা বা নবী ছিল না।

এ সময় আল্লাহ বিশেষ কিছু লোক পাঠাতেন — "হাকিম" বা "বিচারক" (Judges) — যারা তাদের সঠিক পথে রাখতেন।


কিন্তু বারবার কী হত?

তারা আল্লাহর কথা ভুলে যেত,

বাইরের জাতিদের মতো জীবনযাপন করত,

মূর্তিপূজায় জড়িয়ে যেত।

তখন আল্লাহ শাস্তি দিতেন—দুশমন জাতি আক্রমণ করত।
তারা আবার আল্লাহর কাছে তওবা করত—আল্লাহ আবার একজন বিচারক পাঠাতেন।

এই চক্র কয়েক শতাব্দী ধরে চলেছিল।-- >>(তাওরাত / হিব্রু বাইবেল / ওল্ড টেস্টামেন্ট:
Book of Judges (আদি বই)অধ্যায় 2:10–19)

(ইসলামী ইতিহাসবিদ ও মুফাসসিরগণ যেমন ইবনে কাসির (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "কাসাসুল আম্বিয়া" এবং আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া তে বনি ইসরাইলের এই সময়কে বিশ্লেষণ করেছেন।
সেখানে বলা হয়, ইউশা (আঃ)-এর পর একাধিক 'আলিম ও নেককার ব্যক্তি' ছিলেন যারা জাতিকে সঠিক পথে রাখতেন। তবে তারা নবী ছিলেন না।)

------------------------  ------------------------ 
এক সময় বনি ইসরাইলেরা বলল:
"আমরা চাই আমাদের একজন রাজা থাকুক, যেমন অন্য জাতিদের আছে!"

নবী সামুয়েল (শামঊইল আঃ)-কে তারা অনুরোধ করল।
আল্লাহ তাদের জন্য "তালুত" (Saul) নামের একজনকে রাজা বানালেন।

কিন্তু অনেকেই তাকে মানতে চায়নি—কারণ সে গরিব ছিল, অভিজাত বংশের না।
তবুও সে আল্লাহর নির্বাচিত, এবং খুব সাহসী ছিল।

==>>

( তুমি কি দেখনি বনি ইসরাইলের সেই দলের কথা, যারা তাদের নবীর পরে বলল: ‘আমাদের জন্য একজন রাজা নিযুক্ত করো, যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি।’
...
তাদের নবী বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তালুতকে রাজা নিযুক্ত করেছেন।’
তারা বলল, ‘তালুত কীভাবে আমাদের ওপর রাজত্ব করবে? তার তো ধন-সম্পদ নেই।’
তিনি (নবী) বললেন, ‘আল্লাহ তাকে তোমাদের ওপর বাছাই করেছেন এবং জ্ঞান ও দেহে প্রাচুর্য দিয়েছেন...’"
— [সূরা আল-বাকারা: ২:২৪৬–২৪৭]) 



তালুত বনাম জালুত – দাউদ (আঃ) এর আগমন:

তালুতের সময়ে এক বিশাল যুদ্ধ হয় “জালুত” (Goliath) নামের এক ভয়ংকর সৈন্যর সাথে।
তখন দাউদ (আঃ) নামে এক তরুণ ছেলেই জালুতকে হত্যা করে দেয়।
আল্লাহ পরে তাঁকেই নবী বানান এবং রাজাও বানান।

------------------------  ------------------------

দাউদ (আঃ) ও সুলাইমান (আঃ) – সোনালী রাজত্ব:

দাউদ (আঃ)-এর শাসনে বনি ইসরাইল একটি শক্তিশালী রাজত্বে পরিণত হয়।
তিনি জেরুজালেমে রাজধানী স্থাপন করেন।

তার ছেলে সুলাইমান (আঃ)-এর সময় আসে সবচেয়ে শান্তিময়, উন্নত, এবং জ্ঞানভিত্তিক রাজত্ব।

তিনি মানুষ, পশু, পাখির ভাষা বুঝতেন

জিনদের দিয়ে কাজ করাতেন (আল্লাহর আদেশে)

তিনি "বায়তুল মাকদিস" (মহান মসজিদ) নির্মাণ করেন




------------------------  ------------------------  ------------------------ 

সুলাইমান (আঃ)-এর পর জাতির বিভাজন:
সুলাইমান (আঃ) মৃত্যুর পর:

ইহুদি জাতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়:

উত্তর অংশ: ইসরাইল রাজ্য

দক্ষিণ অংশ: ইহুদা রাজ্য

এই বিভাজনের পর দুই অংশের মধ্যে মারামারি শুরু হয়, দুর্বল হয়ে পড়ে।
(Old Testament: 1 Kings 12

ইসলামী ইতিহাস: কাসাসুল আম্বিয়া ও আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

------------------------  ------------------------ 

উত্তর রাজ্য “ইসরাইল”-এর পতন (Assyrian Captivity):


খ্রিস্টপূর্ব 722 সালে, আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজা শালমেনেসার V (Shalmaneser V) ও তার উত্তরসূরি সারগন II (Sargon II) ইসরাইল রাজ্য (উত্তর অংশ) আক্রমণ করে।

রাজধানী সামারিয়া (Samaria) ধ্বংস করে তারা হাজার হাজার ইসরাইলিকে বন্দী করে আসিরিয়া নিয়ে যায়।

বাইবেল রেফারেন্স:
2 Kings (2 রাজা), Chapter 17:6
(ইবনে কাসির (রহঃ) কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে এই ঘটনাকে ইসরাইলিদের অবাধ্যতার ফল হিসেবে উল্লেখ করেন)


দক্ষিণ রাজ্য “ইহুদা”-র পতন ও বাবিলীয় বন্দিত্ব:

খ্রিস্টপূর্ব 586 সালে, বাবিলের রাজা নবুখাদনেজর (Nebuchadnezzar II) জেরুজালেম আক্রমণ করে:

বায়তুল মাকদিস (First Temple) ধ্বংস করে দেয়

রাজা এবং জনগণকে বন্দী করে নিয়ে যায় বাবিলন (Babylon / বর্তমান ইরাক)-এ

প্রায় ৭০ বছর তারা সেখানে বন্দিত্বে ছিল

==>>
বাইবেল রেফারেন্স:
2 Kings 25:8–11

Jeremiah 39:1–10

Daniel 1:1–6 (দানিয়েল নবীকে এখানেই বন্দী করে নেয়া হয়)
ইসলামী ব্যাখ্যা:
ইবনে কাসির (রহঃ), তাবারি (রহঃ) সহ বহু ঐতিহাসিক এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন:

তারা বলেন, নবী ইরমিয়াহ (Jeremiah / أرميا) বারবার বনি ইসরাইলকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু তারা ফিরে আসেনি।

আল্লাহ শাস্তি হিসেবে বাবিলের রাজা বুখতনসর (نبوخذ نصر) কে পাঠান, যিনি বায়তুল মাকদিস ধ্বংস করে দেন।





----------------------------- -------------------------------



পারস্য রাজা কুরুশ (Cyrus the Great) ও ইহুদিদের মুক্তি:

খ্রিস্টপূর্ব 539 BCE সালে পারস্য সম্রাট Cyrus the Great (ফারসি: কুরুশ) বাবিল দখল করে নেয়।
তিনি ইহুদিদের মুক্তি দেন এবং নিজ দেশে ফিরে যেতে ও মন্দির পুনর্নির্মাণ করতে অনুমতি দেন।

বাইবেল রেফারেন্স:
Ezra 1:1–4
এই ঘটনাকে বলা হয় Return from Babylonian Exile (বাবিল বন্দিত্ব থেকে প্রত্যাবর্তন)।

দ্বিতীয় বায়তুল মাকদিস নির্মাণ (Second Temple):

ইহুদিরা জেরুজালেমে ফিরে এসে খ্রিস্টপূর্ব 516 BCE সালের দিকে দ্বিতীয় মন্দির (Second Temple) নির্মাণ করে।

এটি পূর্বের সুলাইমান (আঃ)-এর তৈরি প্রথম মসজিদ এর স্থানে নির্মিত হয়।


রোমান শাসন ও ঈসা (আঃ)-এর আগমন:


রোমানরা জেরুজালেম দখল করে

এ সময় নবী ঈসা (আঃ) আসেন

ইহুদিরা তাঁকে নবী হিসেবে অস্বীকার করে এবং ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করতে চায়

এরপর আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে উত্তোলন করেন

চূড়ান্ত ধ্বংস ও ছড়িয়ে পড়া (

)৭০ খ্রিস্টাব্দে: 


রোমান জেনারেল টাইটাস আবার জেরুজালেম ধ্বংস করেন

ইহুদিদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়

এরপর শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা ভবঘুরে জাতি হয়ে থাকে: ইউরোপ, আরব, পারস্য, স্পেন, ইত্যাদিতে

প্রাথমিক ইতিহাস:

মধ্যযুগীয় যুগে ইহুদি সম্প্রদায়ের বিকাশ (২০০–১৫০০ খ্রিস্টাব্দ):

ইউরোপে, ইহুদিরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডে। সেখানে তারা ব্যবসা, চিকিৎসা, ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখে।

স্পেনে, মুসলিম শাসনের সময় ইহুদিরা "গোল্ডেন এজ" উপভোগ করে, যেখানে তারা বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।

রেফারেন্স:

The Story of the Jews by Simon Schama


-------------------------

ইউরোপে নিপীড়ন ও বিতাড়ন (১৪৯২–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)

১৪৯২ সালে, স্পেনের খ্রিস্টান রাজারা সকল ইহুদিকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। অনেক ইহুদি অটোমান সাম্রাজ্যে আশ্রয় নেয়।

ইউরোপে, ইহুদিরা বিভিন্ন সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়, যেমন রাশিয়ায় পোগ্রোম ও জার্মানিতে বৈষম্য।

বইয়ের রেফারেন্স:

Zakhor: Jewish History and Jewish Memory by Yosef Hayim Yerushalmi

---------------------------------

আধুনিক যুগে ইহুদি জাতীয়তাবাদ ও ইসরায়েলের জন্ম (১৮০০–১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ)

১৮৯৭ সালে, থিওডোর হার্জেল "Zionism" আন্দোলনের সূচনা করেন, যার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।


মাধ্যমিক ইতিহাস:

ইউরোপে ইহুদি বিরোধিতা (Anti-Semitism)

ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নিপীড়ন এই সময়ে রাশিয়া, ফ্রান্স, এবং পূর্ব ইউরোপে তীব্র হয়ে ওঠে।

ড্রেইফাস মামলা (Dreyfus Affair), ১৮৯৪-১৯০৬ — ফ্রান্সে ইহুদি সেনা কর্মকর্তা আলফ্রেড ড্রেইফাসকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়।


এতে ইউরোপজুড়ে ইহুদি অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

ইহুদি অভিবাসন (Aliyah)

অনেক ইহুদি পূর্ব ইউরোপ থেকে প্যালেস্টাইন, আমেরিকা ও ব্রিটেনে অভিবাসন শুরু করেন।

First Aliyah (১৮৮২–১৯০৩) এবং Second Aliyah (১৯০৪–১৯১৪)— মূলত রাশিয়া, পোল্যান্ড ও ইয়েমেন থেকে ইহুদিদের আগমন ঘটে প্যালেস্টাইনে।


তারা কৃষি বসতি স্থাপন করে



১৯১৪–১৯১৮: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ইহুদি ভূরাজনীতি


ব্রিটিশদের প্রতিশ্রুতি ও প্যালেস্টাইনের ভূমিকা

যুদ্ধকালে ইহুদি ও আরবদের সমর্থন পেতে ব্রিটিশরা একইসাথে Balfour Declaration (১৯১৭) জারি করে:
এতে বলা হয়: “His Majesty's Government view with favour the establishment in Palestine of a national home for the Jewish people…”


এটি ইহুদি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, কারণ প্রথমবারের মতো একটি বড় সাম্রাজ্য ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের স্বীকৃতি দেয়।

অটোমান শাসনের অবসান ও ব্রিটিশ ম্যান্ডেট

১৯১৭ সালে, ব্রিটিশ বাহিনী জেরুজালেম দখল করে নেয়।

১৯২০ সালে, লীগ অব নেশনস প্যালেস্টাইনকে ব্রিটিশদের ম্যান্ডেট হিসেবে ঘোষণা করে।

এটি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে।


ইহুদি অভিবাসনের বৃদ্ধি (Third Aliyah)


১৯১৯–১৯২৩: পূর্ব ইউরোপের বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ ও কমিউনিস্ট নিপীড়নের কারণে আরও অনেক ইহুদি প্যালেস্টাইনে চলে আসে।

তৃতীয় আলিয়াহের সময় আধুনিক হিব্রু ভাষা, শ্রমিক আন্দোলন (Histadrut), ও সামন্তবাদবিরোধী আন্দোলনের বিস্তার ঘটে।


নাৎসি পার্টির উত্থান



১৯২০–৩০ দশকে, হিটলারের নেতৃত্বে National Socialist (Nazi) পার্টি ইহুদি বিদ্বেষকে মূল রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

হিটলারের লেখা বই Mein Kampf (১৯২৫)–এ ইহুদি জাতির বিরুদ্ধে তার ঘৃণা স্পষ্ট।


Holocaust বা Shoah (১৯৪১–১৯৪৫)

হিটলারের “Final Solution”–এর আওতায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

যুদ্ধোত্তর শরণার্থী সংকট
লক্ষ লক্ষ ইহুদি ইউরোপে গৃহহীন, ক্যাম্পে বসবাস করছিল।

বিশ্বব্যাপী ইহুদি অভিবাসনের জন্য সমর্থন বেড়ে যায়।

▶ ব্রিটিশ প্যালেস্টাইন ম্যান্ডেটের সমাপ্তি
ব্রিটিশরা প্যালেস্টাইনের ভবিষ্যত নিয়ে জাতিসংঘে দায়িত্ব হস্তান্তর করে।

▶ জাতিসংঘের প্রস্তাব (UN Partition Plan, ১৯৪৭)
প্যালেস্টাইনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব (ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র)।

ইহুদিরা গ্রহণ করে, আরবরা প্রত্যাখ্যান করে।


ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা

ডেভিড বেন গুরিয়ন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ও শরণার্থী সংকট (১৯৪৮–১৯৭৩)

▶ ১৯৪৮ এর প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ
মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক ইত্যাদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

ইসরায়েল জয়লাভ করে এবং অতিরিক্ত জমি দখল করে।

▶ Nakba (النکبة) — "বিপর্যয়"
প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি আশ্রয়হীন হয়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়।

পরবর্তী যুদ্ধসমূহ:
১৯৫৬: সুয়েজ যুদ্ধ

১৯৬৭: ছয় দিনের যুদ্ধ (Six-Day War)

ইসরায়েল গাজা, পশ্চিম তীর, গোলান হাইটস ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে।

১৯৭৩: ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ


এর পরের ইতিহাস মোটামুটি সকলেরই জানা।
কোন সিদ্ধান্তের উপর আসা আমি পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম।

Monday, May 26, 2025

বানাই ব্যক্তিগত সুপার হিরো

আমি ছোটবেলা থেকেই সুপার হিরোদের প্রতি একটু দুর্বল।

আমার অনেক ইচ্ছা ছিল যদি আমি একজন সুপার হিরো হতে পারতাম।

কিন্তু বললেই তো আর সুপারহিরো হওয়া যায় না।

 তবে আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে একজন সাধারন মানুষ থেকে আমরা এক সুপারহিরোতে রূপান্তর হতে পারি। প্রযুক্তি, জ্ঞান, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে।

সিনেমায় সুপার হিরো মানেই বিশাল শরীর, উড়তে পারে, চোখে লেজার ছোড়ে।
কিন্তু বাস্তবে?
বাস্তবে সুপার হিরো মানে—একজন মানুষ, যার আছে “সাধারণের বাইরে কিছু করার সাহস”, আর সেই সাহসকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রযুক্তি।

আমাদের লক্ষ:

আজকে আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ থেকে নিজেদেরকে উন্নীত করা আর তার জন্য আমরা নিজেদের মধ্যে যে যে পরিবর্তন নিয়ে আসবো।

++ একটা মিনি কম্পিউটার
++একটা AI
++একটা ইউনিফর্ম 
++ ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজ্ঞানের সকল তথ্যের জ্ঞান
++ চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান
++ স্মার্ট ল্যাবরেটরী
++ ভার্চুয়াল অস্ত্র
++ নিজস্ব হ্যাকিং বা ও সুপারহিরো গেজেট

এবার শুরু করি কিভাবে আমরা এগুলো নিজেদের কাছে  পেতে পারি

একটা মিনি কম্পিউটার:

নিচের জিনিসগুলো লাগবে:


১. Raspberry Pi Board (Model 3, 4 বা 5 যেকোনোটা)
২. MicroSD Card (16GB বা তার বেশি) – Operating System রাখার জন্য
৩. Power Adapter (5V 3A) – রসবে পায় চালাতে
৪. HDMI Cable ও Monitor – স্ক্রিনে দেখা যাবে
৫. Keyboard ও Mouse
৬. Case (বক্স/কেসিং) – বোর্ডটা ঢাকার জন্য
৭. Internet Connection (Wi-Fi বা LAN cable)

Raspberry Pi-তে অপারেটিং সিস্টেম বসানো:

এটা এমন একটা সফটওয়্যার যেটা দিয়ে তুমি সহজেই অপারেটিং সিস্টেম SD Card-এ বসান যাবে

এই লিংকে গিয়ে https://www.raspberrypi.com/software/

নিচে “Download for Windows” বা “Download for Mac” এ ক্লিক করে ডাউনলোড করতে হবে

ইন্সটল করে ওপেন করতে হবে



------------------------  ------------------------ 
MicroSD Card-টা কম্পিউটারে ঢোকাতে হবে (কার্ড রিডার দিয়ে যদি ল্যাপটপে ঢুকাতে না পারা জায়)।

ইসলামের আলোকে বহু জগতের উপস্থিতি

 ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বহু জগতের উপস্থিতি একটি চমৎকার গবেষণার বিষয় বলে মনে হয়। 

এবং আমার ব্যক্তিগত মতামত যে বহু জগতের অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে যেটা Multiverse  নামে পরিচিত।


আর এই ব্লগে আমি সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করব। প্রমাণ হতেও পারে নাও হতে পারে তবে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হবে ইনশাআল্লাহ।


পার্ট ১: মাল্টিভার্স কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ


আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও কসমোলজির আলোচনায় 'Multiverse' বা বহু-বিশ্ব (একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্ব) একটি আলোচিত ধারণা। এটি অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্ব ছাড়াও অসংখ্য স্বতন্ত্র মহাবিশ্ব অস্তিত্বশীল, যাদের মধ্যে বিভিন্ন মাত্রা, সময় ও অস্তিত্বের ধরন থাকতে পারে। কিন্তু এই ধারণা কি শুধুই আধুনিক বিজ্ঞানীদের কল্পনা, নাকি কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদীসে এই ধারণার কিছু ভিত্তি বিদ্যমান?


-------------- --------------

কুরআনের যে আয়াতগুলো মাল্টিভার্সের ধারণার প্রতি ইঙ্গিত করে


১. সূরা ফাতিহা (১:২)

"الْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِينَ"

অনুবাদ: “সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা।”

এখানে “الْعٰلَمِينَ” (আলামীন) শব্দটি বহুবচন। এটি শুধু মানবজাতি নয়, বরং জিন, ফেরেশতা, প্রাণিজগৎ, দৃষ্টিগোচর ও অদৃশ্য জগত সব কিছুকে বোঝায়। গ্রামার অনুসারে এটি আলাম (عالم)-এর বহুবচন, যার দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা ও অস্তিত্ব বোঝানো হয়। অনেকে একে বহু মহাবিশ্বের দিকে ইঙ্গিত বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।


সূরা তালাক (৬৫:১২)

"اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ..."

অনুবাদ: “আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং পৃথিবী থেকেও তাদের অনুরূপ।”


এই আয়াত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর মতো আরও 'অনুরূপ' পৃথিবী আছে। আরবি ব্যাকরণে "مِثْلَهُنَّ" শব্দটি ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে সংখ্যায় ও প্রকৃতিতে 'সাদৃশ্যপূর্ণ' অনেক পৃথিবী, যা বহু গ্রহ বা মহাবিশ্বকে ইঙ্গিত করতে পারে।

------------------------  ------------------------ 

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এক রাতে আল্লাহ্‌ ‘মি’রাজ’ বা আসমানী সফরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি এক এক করে প্রথম আসমান থেকে সপ্তম আসমান পর্যন্ত গমন করেন এবং প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।


ইঙ্গিত:

এটি স্পষ্ট করে বোঝায় যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরেও একাধিক স্তরের অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো বাস্তব, জীবন্ত এবং সজ্ঞানে রয়েছে।

প্রতিটি আসমানে আলাদা নবী এবং বিশেষ বাস্তবতা ছিল।

এই সাত আকাশ কেবল ভৌত পরিমণ্ডল নয়, বরং পৃথক "dimensions" বা অস্তিত্বের স্তর হিসেবে বোঝা যায়।

------------------------  ------------------------ 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আকাশের প্রতিটি স্তরে রয়েছে এমন ফেরেশতা, যারা কখনো আল্লাহর ইবাদতে বিরতি দেয় না।”


ইঙ্গিত:

এটি প্রতিটি আকাশ বা বাস্তবতা স্তরে আলাদা সত্ত্বা, সিস্টেম, ও বসবাসকারী প্রাণী বা ফেরেশতার অস্তিত্বকে নির্দেশ করে।

এগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এবং সেগুলো মানবজগত থেকে পৃথক হলেও বাস্তব।


------------------------  ------------------------ 

লাওহে মাহফুজ (সংরক্ষিত ফলক) কুরআন ও হাদীসে এক মহা স্তর হিসেবে চিত্রিত হয়, যেখানে কায়েনাতের যাবতীয় ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে। এটি এমন এক মহাবিশ্বগত স্তর, যা আমাদের জ্ঞানের বাইরে।


------------------------  ------------------------ 

নবীজি (সা.) বলেন, “আমি জিবরাইলকে তাঁর প্রকৃত রূপে দেখেছি—তার ৬০০ ডানা রয়েছে, যার প্রতিটি দিক আকাশ আচ্ছন্ন করে রাখে।”


সহীহ মুসলিম, হাদীস: 174

ইঙ্গিত:

এটা বোঝায় যে, আমাদের সীমিত পৃথিবীর বাস্তবতা ছাড়াও এমন অস্তিত্বের স্তর রয়েছে, যেখানে এমন বিশাল সত্ত্বার অস্তিত্ব সম্ভব।

-------------------------৷ ------------------------ 

ইমাম ইবন কাসীর (রহ.) — তাফসীর ইবনে কাসীর:


সূরা তালাক (৬৫:১২) এর তাফসীরে তিনি বলেন, “এখানে আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীর মতো আরও অনুরূপ সৃষ্টির কথা বলেছেন, যা বিভিন্ন স্তরে বা আলাদা পৃথিবী হতে পারে।”


ফখরুদ্দিন আর-রাজি (রহ.) — তাফসীর আল-কাবীর:


সূরা ফাতিহা-এর "العالمين" শব্দের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এটি এমন বহুবচন যা বহু অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। একেকটা আলম মানে একেকটা বাস্তবতা বা অস্তিত্বের পরিমণ্ডল।”


ইবন তাইমিয়্যাহ (রহ.) — মাজমু’ ফাতাওয়া:


তিনি বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোনও সীমা নেই। তিনি এমন জগতও সৃষ্টি করেছেন, যেগুলোর আমাদের জ্ঞান নেই।” (মাজমু’ ফাতাওয়া, খণ্ড ৪,)


------------------------ --------------------------


ইরানের শারিফ ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ ও দার্শনিক Dr. Mehdi Golshani  মাল্টিভার্স ধারণাকে ইসলামী বিশ্বদৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করেন। তিনি বলেন, কসমোলজির সূক্ষ্ম সমন্বয় (fine-tuning) ঈশ্বরের সৃষ্টির সৌন্দর্যের প্রমাণ, যা মাল্টিভার্স ধারণার চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি কুরআনের সূরা ফাতিহার “رَبِّ الْعَالَمِينَ” (সব জগতের পালনকর্তা) শব্দগুচ্ছকে বহু-বিশ্বের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।


--------------------------- -----------------------------

ইসলামী বিজ্ঞান ও দর্শনের গবেষক আদি সেতিয়া ২০০৪ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে কুরআনের সাত আকাশের ধারণাকে মাল্টিভার্সের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, কুরআনের এই বর্ণনা আধুনিক মাল্টিভার্স তত্ত্বের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।


ইমাম ফখরুদ্দিন আর-রাজি (রহ.)

যদিও তিনি মধ্যযুগীয় আলেম, তবে তার তাফসীর “মাতালিব আল-আলিয়া” তে মাল্টিভার্সের ধারণা স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি কুরআনের “رَبِّ الْعَالَمِينَ” আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ্ অসংখ্য জগত সৃষ্টি করতে সক্ষম, যা আমাদের জগতের চেয়েও বৃহৎ ও ভিন্ন হতে পারে।

------------------------------------------------

কোয়ান্টাম মাল্টিভার্স থিওরি (Quantum Multiverse Theory)


তত্ত্বের মূল বক্তব্য:


হিউ এভারেট (Hugh Everett) ১৯৫৭ সালে প্রস্তাব করেন যে, প্রতিটি সম্ভাব্য কোয়ান্টাম সিদ্ধান্ত বাস্তবে ঘটে—তবে ভিন্ন ভিন্ন “ব্রাঞ্চিং ইউনিভার্স”-এ। অর্থাৎ আপনি একটি সিদ্ধান্ত নিলে, আরেকটি আপনি না নেওয়া বিকল্প আরেকটা বিশ্বে ঘটছে।

-------------------...  ---------------


কসমোলজিকাল ইনফ্লেশন থিওরি (Cosmic Inflation and Bubble Universes)

প্রস্তাবক: অ্যালান গুথ (Alan Guth), আন্দ্রে লিন্ডে (Andrei Linde)

মূল বক্তব্য:
বিগ ব্যাং-এর পর মহাবিশ্ব তীব্র গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং এই প্রসারণ একাধিক “বাবল ইউনিভার্স” তৈরি করেছে—যেগুলো প্রত্যেকটি আলাদা পদার্থ ও প্রকৃতি নিয়ে তৈরি।

ইসলামী তুলনা:

সূরা ত্বালাক ৬৫:১২ – "اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ" — “আল্লাহ সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের অনুরূপ পৃথিবীও।”


 

ইসলামে নারীদের পর্দা

ইসলাম নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে না, ইসলাম বলে প্রাপ্য ও  ন্যায্য অধিকারের কথা।


ইসলামে নারীদের পর্দা এবং অধিকার নিয়ে আজকে আমাদের আলোচনা।

ইসলামে নারীদের পর্দা

কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ:

সূরা আন-নূর (সূরা ২৪), আয়াত ৩০-৩১
পুরুষ ও নারীর দৃষ্টি সংযম এবং পর্দা সম্পর্কে:

আয়াত ৩০:
"মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য পবিত্রতা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের খবর রাখেন যা তারা করে।"

আয়াত ৩১:
"আর মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে, তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে—শুধু যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে তা ছাড়া। আর তারা যেন তাদের ওড়না (খিমার) দিয়ে বুক ঢেকে রাখে..


------------------------
সূরা আল-আহযাব (সূরা ৩৩), আয়াত ৫৯
বাহিরে যাওয়ার সময় চাদর/জিলবাব পরার নির্দেশ:

"হে নবী! তোমার স্ত্রীগণকে, তোমার কন্যাগণকে এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের উপরে নিজেদের চাদর (জিলবাব) টেনে দেয়। এটা অধিকতর উপযুক্ত যেন তারা পরিচিত হয় এবং উত্ত্যক্ত না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"


------------------------ 

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর অভিমত:

নারী নামাজে মুখ ও হাত খোলা রাখতে পারে, কারণ সেগুলো আবশ্যিক পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়।

কিন্তু পুরুষদের সামনে বাহিরে গেলে, ফিতনার আশঙ্কা থাকলে মুখ ঢেকে রাখাও ওয়াজিব হয়ে যায়।


মূল রেফারেন্স:

আল-হিদায়াহ (হানাফি ফিকহের প্রধান বই), খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮০

ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮১

আল-দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার

সহজ ভাষায়:
নামাজে তো মুখ ও হাত খোলা রাখা যায়, কিন্তু সমাজে যদি পরপুরুষের সামনে সুন্দরী মুখ ফিতনার কারণ হয়—তাহলে মুখ ঢেকে রাখা জরুরি। তাই মুখ ঢেকে রাখাই নিরাপদ এবং উত্তম।

------------------------ ------------------------ 

ইমাম আশ-শাফি (রহ.) এর পর্দা সম্পর্কিত মতামত
১. নারীর পুরো শরীর—including মুখ ও হাত—আওরাহ (পর্দার অন্তর্ভুক্ত)
মূল মত:

ইমাম শাফি (রহ.) বলেন:
“নারীর শরীরের সমস্ত অংশ পরপুরুষের জন্য আওরাহ, এমনকি মুখ ও হাতও।”
অতএব, নারীর মুখ ও হাতও পরপুরুষের সামনে ঢেকে রাখা ওয়াজিব (অবশ্যকীয়)।


রেফারেন্স:

আল-উম্ম (মূল ফিকহগ্রন্থ) – খণ্ড ১

আহকামুল কুরআন – ইমাম জাসস

মাজমু শারহুল মুহাযযাব – ইমাম নববী (শাফিঈ মতের ব্যাখ্যাকারী)

------------------------ ------------------------ 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মতামত
মূল অভিমত:
নারীর পুরো শরীর, এমনকি মুখ ও হাতও আওরাহ, পরপুরুষের সামনে ঢেকে রাখা ওয়াজিব (অবশ্যকীয়)।


রেফারেন্স:
আল-মুগনী – ইবনে কুদামা (হাম্বলি ফিকহ)

মাসাইল ইমাম আহমদ – আবু দাউদ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদের বর্ণনায়

কুরআন থেকে দলিল:
সূরা আল-আহযাব (৩৩:৫৯):
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের উপরে তাদের চাদরের একাংশ টেনে দেয়…”
ইমাম আহমদের ব্যাখ্যা:

এই আয়াত প্রমাণ করে নারীর সমস্ত শরীর—including মুখ—ঢেকে রাখতে হবে।

হাদীস থেকে দলিল:
আসমা (রা.)-এর হাদীস:
রাসূল (সা.) বলেন,

“হে আসমা! একজন নারী যখন বালিগ হয়, তখন তার শরীরের এই অংশ ব্যতীত কিছু দেখা যাবে না – (ইশারা করলেন) মুখ ও হাত।”
– (আবু দাউদ, হাদীস: ৪১০৪)

ইমাম আহমদের ব্যাখ্যা:

এই হাদীস বিশেষভাবে নামাজের প্রেক্ষিতে, কিন্তু সমাজে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে মুখও ঢাকতে হবে।

------------------------ ------------------------ 
ইমাম ইবনে হাজম (রহ.) এর মতামত
মূল অভিমত:

ইবনে হাজম (আহলুয যাহির) বলেন:
নারীর মুখ ও হাত আওরাহ নয়, তাই পরপুরুষের সামনে তা ঢাকতে ওয়াজিব নয়, যতক্ষণ না ফিতনার আশঙ্কা থাকে।

রেফারেন্স:
আল-মুহাল্লা – ইবনে হাজম, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২১৬

তিনি কেবল প্রকাশ্য দলিলকেই মানেন, কিয়াস ও ইজমা-কে নয় (যাহিরি মাযহাবের বৈশিষ্ট্য)

কুরআন থেকে দলিল:
সূরা আন-নূর (২৪:৩১):
“…তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া…”
ইবনে হাজম বলেন:

এখানকার “যা প্রকাশ পায়” বলতে মুখ ও হাত বোঝানো হয়েছে। তাই সেগুলো ঢাকতে হবে না।

------------------------  ------------------------ 

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) – (হাম্বলি মাজহাব)

মতামত: নারীর পুরো শরীর, এমনকি নখ পর্যন্ত আওরাহ। তিনি বলেন, “আহমদ ইবনে হাম্বলের মাজহাবে প্রসিদ্ধ অভিমত হলো, নারীর পুরো শরীর আওরাহ।”

রেফারেন্স: Majmoo’ al-Fataawa, 22/110
------------------------  ------------------------ 

ইমাম ইবনে আবি যাইদ আল-কাইরাওয়ানি (রহ.) – (মালিকি মাজহাব)

মতামত: তিনি বলেন, “নারীর পুরো শরীর আওরাহ, এমনকি তার কণ্ঠস্বরও।”

------------------------  ------------------------ 

শাইখ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ.) – (আধুনিক সালাফি আলেম)

মতামত: তিনি বলেন, “নারীর মুখ ও হাত আওরাহ নয়; তবে ফিতনার আশঙ্কা থাকলে ঢেকে রাখা উত্তম।”

------------------------  ------------------------ 


সকল মতামত এবং রেফারেন্স থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তই উপনতি হতে পারি যে নারীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তোমার শরীর ঢেকে রাখাই বিধান। 


আল-আলফায আল-মুশতারাকাহ

  আমাদের কুরআনে এরকম অসংখ্য শব্দ রয়েছে যে সকল শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকার কারণে ফতোয়া গত দিক থেকে বিভিন্ন ইমামদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে ...